আয়না ঘর কি এবং কোথায় অবস্থিত।

আয়না ঘর কি এবং কোথায় অবস্থিত।

বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাউন্টার-টেররিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম আয়না ঘর।

শেখ হাসিনার পতনের পর আবারও আলোচনায় এসেছে আয়না ঘর। সেখান থেকে ইতিমধ্যে তিন বন্দিকে ছাড়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে রাজধানীর কচুক্ষেতে ভিড় জমাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিখোঁজদের স্বজনরা।

বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাউন্টার-টেররিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম  আয়না ঘর। একবারে 30 বন্দী রাখার ক্ষমতা সহ এটিতে কমপক্ষে 16 টি সেল রয়েছে বলে মনে করা হয়। আয়না ঘর টি  বাংলাদেশের ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুইডেন ভিত্তিক স্বাধীন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের একটি অনুসন্ধানী হুইসেল ব্লোয়ার রিপোর্ট প্রকাশ করে যে বাংলাদেশী কর্মকর্তারা আয়না কক্ষে নিখোঁজদের জোরপূর্বক আটকে রেখেছে এবং নির্যাতন করছে।

প্রতিবেদনে গোপন কারাগারের সম্ভাব্য অবস্থানও প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বলপূর্বক গুমের শিকার বাংলাদেশে আটক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়

প্রতিবেদনটি বলপূর্বক গুমের শিকার দুই ব্যক্তি হাসিনুর রহমান এবং শেখ মোহাম্মদ সেলিমের অন-দ্য রেকর্ড অ্যাকাউন্টের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। যাদেরকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে কারাগারের ভেতরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

ভারতের জি নিউজ জানাচ্ছে আয়না ঘর। কথাটা যতটা সহজ শোনায় ততটাই রহস্যময়। শেখ হাসিনার আমলে তৈরি এই আয়না বাড়িতে লুকিয়ে রাখা মানুষদের ব্যবহার করা হতো। আলো-বাতাসবিহীন ঘর। সারাক্ষণ পাখা চলছে।

ওই আয়না ঘরে কাকে রাখা হয়েছিল?
শেখ হাসিনার আমলে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছে। তারা কোথায় আছে তার কোনো হদিস নেই। এমনকি সেনাবাহিনীর লোকজনও সেই তালিকায় রয়েছে। আয়ানা ঘর আসলে গোয়েন্দাদের একটি গোপন কারাগার বা ডিটেনশন ক্যাম্প।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়না ঘর হল ‘গুমখানা’। হাসিনার আমলে 2009 থেকে 2021 সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট 605 জনকে সেখানে গোপনে আটক করা হয়েছিল।

2009 থেকে 2017 সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তায় 402 জন নিখোঁজ হয়েছে। ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এ তথ্য জানিয়েছে। 2014 থেকে 2019 সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে 344 জন নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের মধ্যে, 40 জনকে মৃত পাওয়া গেছে, 66 জনকে সরকারি হেফাজতে পাওয়া গেছে এবং 203 জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে, সেন্টার ফর আইন ও সালিশ অনুসারে। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর যারা ফিরে আসেন তারা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে নীরব থাকেন। ধারণা করা হয়, আয়নার ঘরে লুকিয়ে রাখা হয় এই মানুষগুলোকে।

আয়না কক্ষে যারা রয়ে গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ মোবাশ্বর হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়।

এ ছাড়া বাংলাদেশি ব্যারিস্টার ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম, সাবেক সামরিক জেনারেল ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমি, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা। সম্প্রতি আয়না ঘর থেকে মুক্তি পেয়েছে।

জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ এসব ঘটনার জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের নিন্দা করেছিল।

সে সময় নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা মায়ের ডাক নামে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেন। ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে যাদের পরিবারের সদস্যদের জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে তাদের মামলাগুলো সামনে আনতে এই সংগঠনটি তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন ও আটকের আরও অনেক জায়গা থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সম্প্রতি দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা শেখ হাসিনা বিরোধী মতামত সহ্য করতে পারেননি। আর সে কারণেই রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল আয়না ঘর। যা ছিল রাজনৈতিক বন্দীদের কাছে সন্ত্রাস বা ভীতি। হাসিনার তৈরি রাজনৈতিক কর্মীদের আস্তানা। বিক্ষোভকারীদের নীরব করার একটি উপায়। সারা দেশে ডিজিএফআই-এর 23টি গোপন আটক কেন্দ্র রয়েছে। যার কিছু ঢাকায়।

2024 সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনা 2009 সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার পতন পর্যন্ত বাংলাদেশে 600 টিরও বেশি গুম হয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়না ঘর থেকে খুব কম বন্দী মুক্তি পেয়েছে। তবে দীর্ঘ বিচারের পর কিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকে আবার এনকাউন্টারের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনার তদন্ত প্রায় নেই বললেই চলে। ঘরে আয়না রাখা অনেকেই দিনের পর দিন অত্যাচার সইতে না পেরে মারা যায়। তারপর লাশ সরিয়ে ফেলা হয়। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের খাতায় কোনো তথ্য রাখা হয় না। আর যারা হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন তারাই আয়না ঘরের দায়িত্বে ছিলেন। আয়না কক্ষের বন্দী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা বা যোগাযোগের জন্য কোন আইন ছিল না।এমনি অনেকে জানতো ও না যে ওখানে যারা বন্ধি আছে তারা বেঁচে আছে কিনা।বন্ধিদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হতো।

 

One thought on “আয়না ঘর কি এবং কোথায় অবস্থিত।

Comments are closed.