মেজর ডালিম এর অজানা ইতিহাস

 

মেজর ডালিম (মেজর শরিফুল হক ডালিম) ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা যিনি 1975 সালের 15 আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সাথে জড়িত ছিলেন। এই ঘটনার পর, তিনি ইতিহাসে একটি বিতর্কিত এবং রহস্যময় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের। তার জীবনের অনেক দিক এখনও অজানা বা স্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়নি। মেজর ডালিমের অজানা ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে তুলে ধরা হলো:

কর্মজীবন:

শরিফুল হক ডালিম 1964 সালে প্রথম পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। 1965 সালের ভারত-পাক যুদ্ধের পর তিনি বিমান বাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি 1971 সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। [11] 15 আগস্ট, 1975 সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর, তিনি সেনাবাহিনীতে পুনরায় নিযুক্ত হন এবং লে. কর্নেল পদে উন্নীত হন। 1976 সালে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে একজন কূটনীতিক হিসেবে পাঠানো হয়। 1980 সালে তিনি লন্ডন হাই কমিশনে যোগ দেন। 1982 সালে, তিনি কমিশনার হিসাবে হংকংয়ের দায়িত্ব নেন। 1988 সালে কেনিয়াতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তাকে তানজানিয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি UNEP এবং HABITAT-এ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সোমালিয়া যুদ্ধের সময় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর অংশ হিসেবে প্রেরিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি 1995 সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:

শরিফুল হক ডালিম মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানে (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান) ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২০শে এপ্রিল তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে আসেন এবং সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তবে, ২০২১ সালের ৬ জুন, তৎকালীন সরকার শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শরিফুল হক ডালিমসহ চারজনের স্বাধীনতা যুদ্ধের খেতাব বাতিল করে।

শেখ মুজিবকে হত্যা

মেজর ডালিম ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। [৪] 1975 15 আগস্ট ডালিমকে রাষ্ট্রপতি মুজিবকে হত্যার নেতৃত্ব দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু ডালিম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর তাকে ২য় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে নিয়োগ দেওয়া হয়। সামরিক অভ্যুত্থানের সময় শেখ মুজিব নিহত হন। পরে ডালিম বাংলাদেশ বেতারের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং ঘোষণা দেন: ‘আমি মেজর ডালিম, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। কারফিউ জারি করা হয়েছে।'[14]

শেখ মুজিব হত্যা মামলায় মেজর ডালিমের মৃত্যুদণ্ড হয়। তবে বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন

বিদেশে জীবন:

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ডালিমসহ অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে। মেজর ডালিম প্রাথমিকভাবে জার্মানি, পাকিস্তান এবং লিবিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশে অবস্থান করেছিলেন বলে জানা গেছে। প্রবাসে থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। লন্ডন, করাচি এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তার অবস্থানের খবর পাওয়া গেছে।

বিচার ও শাস্তি:

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় কোনো বিচার হয়নি। 1996 সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মেজর ডালিম সহ অন্যান্য ঘাতকদের আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয় এবং 2010 সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু ডালিম এখনও নির্বাসনে লুকিয়ে ছিলেন, এইভাবে তিনি বিচার ও শাস্তি থেকে মুক্ত ছিলেন।

পর্যালোচনা:

মেজর ডালিমের জীবন ও কর্মকাণ্ড নানা বিতর্ক ও জটিলতায় ঘেরা। একদিকে মুক্তিযোদ্ধা ও সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে দেশের জন্য লড়াই করেছেন, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাসে বিতর্কিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন তিনি।১৯৭৫ সালের পর তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে রয়েছেন এবং তার বর্তমান অবস্থান বা অবস্থা সম্পর্কে কোনো সঠিক বা আপডেট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।