ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা কি এবং এর মাধ্যমে কি কি কাজ করা হয়

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা কি এবং এর মাধ্যমে কি কি কাজ করা হয়:

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেটের উপর অর্পিত বিচারিক ক্ষমতার একটি রূপ। একজন ম্যাজিস্ট্রেট হলেন বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা যিনি আইন ও বিচার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের জন্য দায়ী। ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা সাধারণত ফৌজদারি মামলা, সামাজিক আইন শৃঙ্খলা এবং ছোটখাটো অপরাধের বিচার, তদন্ত এবং শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলন দুই মাস ধরে মাঠে থাকলেও এই প্রথম সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীকে গ্রেপ্তার বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারেন

এ ছাড়া সেনা কর্মকর্তারা আগামী দুই মাস অপরাধীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন ধারায় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

সাধারণত দেশে জরুরি অবস্থা ছাড়া সেনাবাহিনীকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয় না।

বাংলাদেশের সব সংসদ নির্বাচনে যখন সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে ‘ম্যাজিস্ট্রেসি’ দেওয়ার দাবি ওঠে।

তবে নির্বাচনি মাঠে কখনো সেনাবাহিনী কে সে সকল ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। যার ফলে বিগত কয়েক বছর নাম মাত্র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে অন্তর্বতীকালিন সরকার ড.ইউনূস সেনাবাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করেন।এরপর এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই বিচারিক ক্ষমতা পাওয়ার পর সেনাবাহিনীকে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।তারা নিজেরা এখন এসব বিষয়ে সিন্ধান্ত নিতে পারবেন।

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নতুন সরকার গঠিত হলেও মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। এই সংকট নিরসনে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা থাকলে মাটির পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।

সেনাবাহিনী যা করতে পারে
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সেনা কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭ ধারার অধীনে তাদের ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীকে ধারা ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারায় এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি কোড 1898।

ফৌজদারি কার্যবিধির এই ধারা অনুযায়ী যেহেতু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পেয়েছেন, এখন থেকে সেনা কর্মকর্তাদের সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের সরাসরি গ্রেপ্তার করা যাবে, জামিনও দিতে পারবেন।

বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় সেনা কর্মকর্তারা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারেন। তারা পুলিশকে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার নির্দেশও দিতে পারে। অবৈধভাবে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারে তল্লাশি চালাতে পারে।

নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ ও সমাবেশ করতে দেখা যায়।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে সেনা কর্মকর্তারা অবৈধ জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পারবেন। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী বেসামরিক বাহিনীকেও ব্যবহার করতে পারে তা বন্ধ করতে।

এছাড়াও স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আদেশ জারি করতে পারে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করতে পারে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মো. নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কমিশনড আর্মি অফিসাররা দায়িত্ব নেওয়ার সময় ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পেতে পারেন।”

ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতার অধীনে যা করা হয়:

1. জেলা ও দায়রা জজের অধীনে বিচারিক কার্যাবলী: ম্যাজিস্ট্রেট চুরি, জালিয়াতি, মারামারি ইত্যাদির মতো ছোটখাটো ফৌজদারি মামলার বিচার করতে পারেন।

2. অপরাধীদের শাস্তি: ম্যাজিস্ট্রেটরা ছোটখাটো অপরাধের জন্য দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে পারেন, যেমন জরিমানা বা কারাদণ্ড।

3. পুলিশ তত্ত্বাবধান এবং গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি: ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের তদন্তমূলক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন এবং প্রয়োজনে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করতে পারেন।

4. জামিন মঞ্জুর বা বাতিলকরণ: ম্যাজিস্ট্রেট একজন ব্যক্তির জামিন বা জামিন বাতিল করতে পারেন।

5. বিবাহ নিবন্ধন এবং লাইসেন্স প্রদান: কিছু ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বিবাহ নিবন্ধন বা অন্যান্য লাইসেন্স প্রদান করেন।

6. শান্তি বজায় রাখা: সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, 144 ধারা জারি করা, যা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।

 

ম্যাজিস্ট্রেটদের কিছু বিভাগ:

1. নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট: যারা প্রশাসনিক এবং আইন প্রয়োগকারী কার্যাবলীর সাথে জড়িত।

2. জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট: যারা বিচারিক কার্য সম্পাদন করেন, অর্থাৎ আদালতে বিচার পরিচালনা করেন।

বাংলাদেশের অধিকাংশ জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে থাকে।

নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিতে ইসির কাছে দাবি জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

কিন্তু অতীতে কোনো নির্বাচন কমিশন সে ক্ষমতা সেনাবাহিনীকে দেয়নি।

ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতার মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব।